বন্ধুরা আজকে আমরা কথা বলবো নামাজের নিয়ম ও দোয়া নিত্য নামাজের নিয়ত ও দোয়া আমরা সবাই জানি তারপর আজকে আবার আলোচনা করব যারা জানেন না তাদের জন্য আমার এই পোষ্টটি করা তো আমাদেরই পোস্টের আশা করি সঠিক নিয়ম পাবেন আর যদি আমাদের কোন ভুল হয়ে থাকে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টে জানাবেন কোথায় আমাদের ভোর হয়েছে তো চলুন শুরু করা যাক
নামাজের সংক্ষিপ্ত নিয়মাবলী
আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের অধিকাংশ মুসলিমই হানাফি মাজহাবের অনুসারী। তাই হানাফি মাজহাব অনুসারেই নিচে নামাজ পড়ার সংক্ষিপ্ত নিয়ম উল্লেখ করা হলো। এখানে উল্লেখ্য, চার ইমামের যে কারো তরিকা গ্রহণ করলেও সমস্যা নেই।
প্রথমে ওজুসহকারে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।
দুই,তিন ও চার রাকাত নামাজের নিয়মঃ
জায়নামাজে দাঁড়িয়ে নামাজ শুরুর পূর্বেই এই দোয়া পড়তে হয়-"ইন্নি ওয়াজ্জাহ তু ওয়াজ্ হিয়া লিল্লাজি, ফাত্বরস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল্ আরদ্বঅ হানি-ফাওঁ ওয়ামা-আনা মিনাল মুশরিকী-ন"।অর্থ-নিশ্চই আমি তারই দিকে মুখ করলাম, যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং বাস্তবিকই আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই ।
অতঃপর নিয়ত (ওয়াক্ত, রাকাত এবং ধরন অনুযায়ী)।সানা পাঠঃ
নিয়ত করে হাত বাধার পর এই দোয়া পড়তে হয়-"সুবহা-না কাল্লা-হুম্মা ওয়া বিহাম্ দিকা ওয়াতাবারঅ কাস্ মুকা ওয়াতা’ আ-লা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলা-হা গাইরুক"।
অর্থ- হে আল্লাহ ! আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং আপনার মহিমা বর্ণনা করছি। আপনার নাম বরকতময়, আপনার মাহাত্ম্য সর্বোচ্চ এবং আপনি ভিন্ন কেহই ইবাদতের যোগ্য নয় ।
তাআ’উজ পাঠাঃ সানার পর পড়তে হয়-"আউযুবিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম"।
অর্থ- বিতারিত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি ।
তাসমিয়া পাঠঃ তাআ'উজ পাঠের পর পড়তে হয়-"বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম"।
অর্থ- পরম দাতা ও দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি ।
অতঃপর সূরা ফাতিহা পাঠ করে কোরআনের যে কোন স্থান হতে কয়েক আয়াত পাঠ করতে হয়। আয়াত বা সূরা পাঠের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা উত্তম।
ফাতিহা পাঠ ও কোরআনের আয়াত বা অপর সূরা পাঠের পর রুকুতে যেতে হয়।রুকুর তাসবীহঃ রুকুতে পাঠ করতে হয়-"সুবহা-না রব্ বি ইঃয়াল্ আ’জ্বীম।অর্থ-মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহাত্মতা ঘোষণা করছি ।
তাসমীঃ রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় পড়তে হয়-"সামি আল্লা হুলিমান হামিদাহ"।অর্থ-প্রশংসাকারীর প্রশংসা আল্লাহ শোনেন ।
তাহমীদঃ রুকু থেকে দাঁড়িয়ে পড়তে হয়-"রাব্বানা লাকাল হামদ"। অর্থ- হে আমার প্রভু, সমস্ত প্রশংসা আপনারই ।
সিজদার তাসবীহঃ সিজদায় পড়তে হয়-"সুবহা-না রাব্বিয়াল আ’লা"। অর্থ- আমার প্রতিপালক যিনি সর্বশ্রেষ্ট, তারই পবিত্রতা বর্ণনা করছি।
দু’সিজদার মাঝখানে পড়ার দোয়াঃ দুই সিজদার মাঝখানে সামান্য বিরতি দিতে হয়, তখন পড়তে হয়"-আল্লাহু ম্মাগ ফিরলী ওয়ার হামনি ওয়ার যুক্কনী"।অর্থ- হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে রহম করুন, আমাকে রিজিক দিন ।
এইভাবে এক রাকাত নামাজ শেষ হল।অতঃপর পুনরায় দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় রাকাত শুরু করতে হয়। দ্বিতীয় রাকাতে সানা পাঠ করতে হয় না। সানার পরবর্তী নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।
দুই রাকাত নামাজ শেষে বসতে হয়।দুই রাকাত পর বৈঠকঃ বৈঠকে যা পড়তে হয়-তাশাহুদ বা আত্তাহিয়্যাতুঃ তাশাহুদে পড়তে হয়-"আত্তাহিয়্যাতু লিল্লা-হি, ওয়াছ ছালা-ওয়াতু, ওয়াত-তাইয়্যিবা তু, আচ্ছালা মু আ’লাইকা, আইয়্যুহান নাবিয়্যু, ওয়ারাহ মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, আচ্ছালামু আলাইনা, ওয়া আ’লা ইবাদিল্লা হিছ-ছা লিহীন। আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু ।
অর্থঃ আমাদের সব সালাম শ্রদ্ধা, আমাদের সব নামাজ এবং সকল প্রকার পবিত্রতা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে। হে নবী, আপনার প্রতি সালাম, আপনার উপর আল্লাহর রহমত এবং অনুগ্রহ বর্ষিত হউক । আমাদের ও আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর আল্লাহর রহমত এবং অনুগ্রহ বর্ষিত হউক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই, আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর বান্দা এবং রাসুল।
দরুদ শরীফঃ তাশাহুদ বা আত্তাহিয়্যাতুর পর পড়তে হয়-"আল্লহুম্মা ছাল্লি আ’লা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আ’লা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা আ’লা ইব্রহীমা ওয়া আ’লা আ-লি ইব্রহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজী-দ্ ।আল্লাহুম্মা বারিক্ আ’লা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আ’লা আ’লি মুহাম্মাদিন, কামা বা-রাকতা আ’লা ইব্রহীমা ওয়া আ’লা আ’লি ইব্রহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ ।
অর্থ- হে আল্লাহ, দয়া ও রহমত করুন হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর প্রতি এবং তার বংশধরদের প্রতি, যেমন রহমত করেছেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও তার বংশধরদের উপর। নিশ্চই আপনি উত্তম গুনের আধার এবং মহান। হে আল্লাহ, বরকত নাযিল করুন হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর প্রতি এবং তার বংশধরদের প্রতি, যেমন করেছেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও তার বংশধরদের উপর। নিশ্চই আপনি প্রশংসার যোগ্য ও সম্মানের অধিকারী।
দোয়ায়ে মাসূরাঃ দরুদ শরীফ পাঠের পর পড়তে হয়-"আল্লা-হুম্মা ইন্নী জ্বলামতু নাফসী জুলমান কাছীরও ওয়ালা ইয়াগফিরু যুনূবা ইল্লা আনতা ফাগ্ ফিরলী মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা ওয়ার হামনী ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহীম।
অর্থ- হে মহান আল্লাহ, আমি আমার নিজের উপর অনেক জুলুম করেছি (অর্থাৎ অনেক গুনাহ/পাপ করেছি) কিন্তু আপনি ব্যতীত অন্য কেহ গুনাহ মাফ করতে পারে না। অতএব হে আল্লাহ অনুগ্রহ পূর্বক আমার গুনাহ মাফ করে দিন এবং আমার প্রতি সদয় হোন; নিশ্চই আপনি অতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু ।
যদি নামাজ দুই রাকাতের হয় তবে দুই রাকাতের বৈঠকে তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ, দোয়ায়ে মাসূরা পাঠের পর সালাম ফিরাতে হবে।
যদি নামজ তিন রাকাতের হয় তবে দুই রাকাত নামাজ শেষে অর্থাৎ দুই রাকাতের বৈঠকে শুধু তাশাহুদ বা আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। দাঁড়িয়ে সানার পরবর্তী অংশ পাঠের মাধ্যমে প্রথম রাকাতের নিয়মে আরো এক রাকাত নামাজ আদায় করে তৃতীয় রাকাত সম্পন্ন করতে হবে। তৃতীয় রাকাতের শেষে বসতে হবে। শেষ বৈঠকে বসে তাশাহুদ বা আত্তাহিয়্যাতু, দুরুদ শরীফ ও দোয়া মাসূরা পাঠ করে সালাম ফিরিয়ে নিতে হবে।
নামাজ যদি চার রাকাতের হয় তবে দুই রাকাত নামাজ শেষে অর্থাৎ দুই রাকাতের বৈঠকে শুধু তাশাহুদ বা আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। দাঁড়িয়ে সানার পরবর্তী অংশ পাঠের মাধ্যমে প্রথম রাকাতের নিয়মে আরো এক রাকাত নামাজ আদায় করে তৃতীয় রাকাত নামাজ সম্পন্ন করতে হবে। তৃতীয় রাকাত শেষে না বসে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।
পুনরায় সানার পরবর্তী অংশ পাঠের মাধ্যমে আরো এক রাকাত নামাজ আদায় করে চতুর্থ রাকাত সম্পন্ন করতে হবে। চতুর্থ রাকাতের পর বৈঠকে অর্থাৎ শেষ বৈঠকে তাশাহুদ বা আত্তাহিয়্যাতু, দুরুদ শরীফ ও দোয়া মাসূরা পাঠ করে সালাম ফিরিয়ে নিতে হবে।
ফজর নামাজের নিয়ম
ফজরের নামাজ ( صلاة الفجر) অবশ্য পালনীয় দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দিনের শুরুর নামাজ। ফজরের নামাজ আদায় করেই মুসলিমরা তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম শুরু করেন। ফজরের নামাজ দুই রাকাত সুন্নত ও দুই রাকাত ফরজ নামাজ নিয়ে গঠিত। আপনারা নামাজের নিয়মাবলি থেকে দুই রাকাআত নামাজের জন্য নামাজের নিয়ম ও প্রয়োজনীয় দোয়া দেখে নিতে পারেন।
সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত ফজরের নামাজের সময়। অর্থাৎ ফজরের নামাজ খুব দ্রুত পড়ে ফেলতে হয়।
যোহরের নামাজের নিয়ম
যোহরের নামাজ বা সালাতুল যুহর (صلاة الظهر)
দৈনিক নামাজগুলোর দিক থেকে এটি দ্বিতীয়। এটি ঠিক দুপুর থেকে আসরের পূর্ব পর্যন্ত আদায় করা হয়। যোহরের নামাজ প্রথমে চার রাকাত সুন্নত, চার রাকাত ফরজ ও এরপর দুই রাকাত সুন্নত নিয়ে গঠিত। নামাজি ব্যক্তি যদি মুসাফির অবস্থায় থাকে তাহলে সে চার রাকাত ফরজকে সংক্ষিপ্ত করে দুই রাকাত করতে পারে ও সুন্নত আদায় না করতে পারে। শুক্রবার যোহরের পরিবর্তে জুম্মার নামাজ আদায় করা হয়। জুম্মা ও যোহরের সময় শুরু ও শেষ হওয়ার সময়সীমা একইরকম।
আসরের নামাজের নিয়ম
আসরের নামাজ (صلاة العصر) দৈনিক নামাজের ক্রমের দিক দিয়ে এটি তৃতীয়। এটি বিকেলের সময় আদায় করা হয়। আসরের নামাজ চার রাকাত সুন্নত ও চার রাকাত ফরজ নিয়ে গঠিত। তবে ব্যক্তি মুসাফির অবস্থায় থাকলে চার রাকাত ফরজকে সংক্ষিপ্ত করে দুই রাকাত করে কসর আদায় করতে পারবেন।
মাগরিবের নামাজের নিয়ম
মাগরিবের নামাজ (صلاة المغرب) দৈনিক নামাজগুলোর ক্রমের মধ্যে চতুর্থ। এটি সূর্যাস্তের পর থেকে গোধূলি পর্যন্ত আদায় করা যায়। এটিও দ্রুততম সময়ে পড়ে ফেলা উত্তম। মাগরিবের নামাজ তিন রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নত নিয়ে গঠিত। ফরজ অংশ সাধারণত ইমামের নেতৃত্বে জামাতের সাথে আদায় করা হয় আবার একা ও আদায় করা যায়। তবে ব্যক্তি যদি মুসাফির অবস্থায় থাকে তাহলে শুধু তিন রাকাত ফরজ আদায় করতে পারে কসর হিসেবে
এশার নামাজের নিয়ম
এশার নামাজ (صلاة العشاء) দৈনিক নামাজগুলোর মধ্যে এটি পঞ্চম। এটি রাতের সময় আদায় করা হয়। এশার নামাজের ফরজ চার রাকাত। এরপর দুই রাকাত সুন্নত ও তিন রাকাত বিতর নামাজ রয়েছে। ফরজ নামাজের পূর্বে ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ পড়া হয়। তবে এটি না পড়লে কোনো গুনাহ হবে না। ব্যক্তি মুসাফির অবস্থায় থাকলে চার রাকাত ফরজকে সংক্ষিপ্ত করে দুই রাকাত করতে পারেন কসর হিসেবে।